ঢাকা,সোমবার, ৬ মে ২০২৪

আদালতের উচ্ছেদ অভিযানে বাঁধা, চাঁদা দাবি, জায়গা দখল, লুটপাট

চকরিয়া পৌরকাউন্সিলর বেলাল উদ্দিনসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি ::
কক্সবাজারের চকরিয়ায় আদালতের নির্দেশে চারটি হিন্দু পরিবারের জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে বাঁধা দেওয়া এবং অভিযানের একঘন্টার মধ্যে পুনরায় সেই জায়গা দখলের অভিযোগে উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা রুজু করা হয়েছে। সরকারী কাজে বাঁধা, চাঁদাবাজি, হত্যাচেষ্টা, লুটপাট, অনধিকাপ্রবেশসহ বিভিন্ন ধারায় রুজুকৃত মামলায় পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বেলাল উদ্দিনসহ ১০ জনকে এজাহারনামীয় আসামী করা হয়েছে। অন্য আসামীরা অবৈধ দখলকার।
গতকাল রবিবার দুপুরে ভুক্তভোগী চার হিন্দু পরিবারগুলোর পক্ষে মামলাটি দায়ের করেন আদালতের রায়ে জায়গা ফিরে পাওয়া হারাধন দাশ। আদালতের বিচারক রাজীব কুমার দেব অভিযোগটি আমলে নিয়ে চকরিয়া থানার ওসিকে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
প্রয়াত মনিন্দ্র লাল দাশের পুত্র মামলার বাদী হারাধন দাশ জানান, দিগরপানখালী মৌজার বেদখল হওয়া পৈতৃক ১০ শতাংশ জমি ফিরে পেতে ২০০৮ সালে আদালতে মামলা করেন চার ভাই পেঠান দাশ, হারাধন দাশ, প্রেমধন দাশ ও সাধন দাশ। ২০১৮ সালে সেই মামলার রায় পান। এর পর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের আরো একটি মামলা রুজু করা হয় আদালতে। সেই মামলার রায় শেষে আদালত নির্দেশ দেয় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বাদীপক্ষকে জায়গা বুঝিয়ে দিতে। সেই আদেশমতে গত বৃহস্পতিবার সহকারী জজ আদালতের প্রতিনিধি নাজির দেবু গুপ্তের নেতৃত্বে উকিল কমিশন, পুলিশসহ সরজমিন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে যায়। এ সময় পৌরকাউন্সিলর বেলাল উদ্দিন আদালতের উচ্ছেদ অভিযান কার্যক্রমে বাঁধা দেন। খবর পেয়ে থানার ওসির নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ গিয়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেন। কিন্তু উচ্ছেদ শেষে আদালতের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট চলে গেলে কাউন্সিলর বেলালের নেতৃত্বে অর্ধ শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিয়ে উদ্ধারকৃত জায়গা পুনরায় দখল নেয়। এমনকি ওই জায়গার পাশে আগে থেকে বিদ্যমান পৈতৃক বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, মিটার খুলে নেওয়া, নির্মাণাধীন বাড়ির রড, সিমেন্টসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বাউন্ডারি দেওয়াল।
বাদী হারাধন বলেন, ‘পৌরকাউন্সিলর বেলাল উদ্দিন আগে থেকে আমাদের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। সেই চাঁদা না দেওয়ায় আদালতের উচ্ছেদ কার্যক্রমে প্রথমে বাঁধা দেন। এমনকি উচ্ছেদ অভিযান শেষ হওয়ার পর পরই আমরা চার ভাইয়ের পরিবার বাড়িঘরেও থাকতে পারিনি। পরিবার সদস্যদের প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে সশস্ত্র সন্ত্রাসী জড়ো করে সেখানে অবস্থান করায় গত তিনদিন ধরে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। এই ঘটনার পর জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে কাউন্সিলর বেলাল উদ্দিনসহ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরী রুজু করলেও কোন প্রতিকার পাইনি। এই অবস্থায় রবিবার আদালতের দ্বারস্থ হন তারা।
মামলার কৌসুলী চকরিয়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের আইনজীবী মিফতাহ্ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আদালতের কার্যক্রমে বাঁধাগ্রস্ত করা ফৌজদারি অপরাধ। তাও একজন নির্বাচিত কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। তাই সরকারী কাজে বাঁধা, চাঁদাবাজি, হত্যাচেষ্টা, লুটপাট, অনধিকাপ্রবেশসহ বিভিন্ন ধারায় মামলাটি রুজু করা হয়েছে। শুনানী শেষে বিজ্ঞ বিচারক অভিযোগ আমলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।’
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, ‘এখনো আদালতের আদেশ বা মামলার কপি হাতে আসেনি। কাগজপত্র প্রাপ্তিসাপেক্ষে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

পাঠকের মতামত: